আমাদের বিদ্যালয় পত্রিকা

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ডিজিটাল প্রযুক্তি - | NCTB BOOK
71
71

 

“আমাদের বিদ্যালয় পত্রিকা’ শিখন অভিজ্ঞতাটিতে আমরা একটি বিদ্যালয় পত্রিকা বানাব। এই বিদ্যালয় পত্রিকাটি বানানোর জন্য আমরা কিছু দলে ভাগ হব এবং প্রতিটি দল কিছু বিষয় নির্ধারণ করব। নির্ধারিত বিষয়ে বাসা থেকে একটি প্রতিবেদন শ্রেণিতে পিষে নিয়ে আসব এবং এই প্রতিবেদনটি ভালো করে পর্যালোচনা করে, কিছু খেলার মাধ্যমে, কিছু ছোট মজার কাজ করার মাধ্যমে আমারা বিদ্যালয় পত্রিকাটি বানাব। এর পাশাপাশি বিদ্যালয় পত্রিকা বানানোর সময় আমরা যদি অন্য কারও লেখা, গান, কবিতা, ছবি ইত্যাদি ব্যবহার করি, তাহলে তার নাম ব্যবহার করে আমাদের বিদ্যালয় পত্রিকাটি আমরা বানাব। আমাদের অবশ্যই উচিত যার যা জিনিস। তা ব্যবহারের আগে তার অনুমতি নেওয়া। আর অনুমতি না নিতে পারলে অন্তত ব্যবহারের সময় তার নাম উল্লেখ করা। এটি খুব ভালো একটি কাজ।

আমরা কি জানি, বিদ্যালয় পত্রিকা কীভাবে তৈরি করতে হয়? বা বিদ্যালয় পত্রিকা দেখতে কেমন? আমরা না জানলেও কোনো অসুবিধা নেই। বিদ্যালয় পত্রিকা তৈরির সময় শিক্ষক বিদ্যালয় পত্রিকা কীভাবে বানাতে হয় তার নির্দেশনা দিয়ে দেবেন। এবার আগে দেখে নেওয়া যাক একটি বিদ্যালয় পত্রিকা দেখতে কেমন হয়। নিচের ছবিটি খেয়াল করি, এটি একটি বিদ্যালয় পত্রিকার ছবি। এই পত্রিকার ভেতরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখা বিভিন্ন গল্প, কবিতা, কাহিনী ও প্রতিবেদন লেখা থাকে।

এ রকম একটি সুন্দর বিদ্যালয় পত্রিকা তৈরি করতে হলে শ্রেণি ও বাড়ির কিছু ছোট কাজের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হবে। তাহলেই আমরা বন্ধুরা মিলে একটি সুন্দর ও নিয়ম-নীতি মেনে বিদ্যালয় পত্রিকা তৈরি করতে পারব। তৈরি হয়ে যাওয়ার পর পত্রিকাটি আমরা সবাই মিলে আমাদের প্রধান শিক্ষক অথবা বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অথবা বিদ্যালয়ের পাশের বইয়ের দোকানের মালিককে উপহার হিসেবে দিতে পারি।

 

সেশন ১ঃ খেলা খেলি, প্রতিবেদন দেখি

 

 

এই বিদ্যালয় পত্রিকা তৈরির প্রথম কাজ হলো একটি প্রতিবেদন তৈরি করা। আমাদের শিক্ষক গত সেশনের শেষে প্রতিবেদন তৈরির একটি নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছিলেন। প্রতিবেদনটি আমাদের খাতায় এক পাতার ভেতরে লিখতে হবে। আমাদের সুবিধার জন্য নির্দেশনাটি আবার এখানে দেওয়া হয়েছে।

 

প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশিকা

  • আমাদের ৫-৮ জনের একটি দল তৈরি করতে হবে। চাইলে উপহার বানানোর সময় যে দল ছিল সে দলটিই আবার একসঙ্গে কাজ করতে পারি।
  • প্রতিটি দল একটি থিম বা বিষয় নির্ধারণ করব।
  • এই বিষয়ের বা থিমের ওপর একটি এক পাতার প্রতিবেদন লিখে নিয়ে আসব।
  • প্রতিবেদনটিতে অবশ্যই অন্য ব্যক্তির তৈরি গল্প/ছবি/কবিতা বা তথ্য যুক্ত করব। নিজের মতামত দিয়ে প্রতিবেদনটি লিখব।
  • প্রতিবেদনটি তৈরি করতে আমরা পরিবার, প্রতিবেশী, শিক্ষক, বড় শিক্ষার্থী, বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যম, ইউনিয়ন রিসোর্স সেন্টার বা যেকোনো উৎস থেকে সহায়তা নিতে পারি।
  • প্রতিবেদনের একটি নাম শিরোনাম দেব।

 

আমরা নিশ্চয়ই শিক্ষকের নির্দেশনা মেনে প্রতিবেদনটি খাতায় লিখেছি। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, বিদ্যালয় পত্রিকা তৈরি না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত লিখিত প্রতিবেদনটি আমাদের সঙ্গে শ্রেণিতে রাখতে হবে সব সময়। আমাদের তৈরি প্রতিবেদনের শিরোনামটি নিচের ছকে লিখি।

 


 

 

বাজার বাজার খেলাঃ  এবার শ্রেণিতে একটি মজার খেলা হবে। শ্রেণিতে কী খেলা হবে শিক্ষকের কাছ থেকে আমরা জেনে নিতে পারি। খেলাটি আমাদের সবাই মিলে খেলতে হবে। খেলাটি খেলার সময় একে অপরের প্রতি সম্মান রেখে, শঙ্খলা বজায় রেখে আমাদের খেলতে হবে। শ্রেণিতে খেলা চলাকালে আমরা যাদের প্রতিবেদনটি দেখেছি, তাদের মধ্যে একজনের নাম ও কিছু প্রশ্ন দিয়ে তাদের প্রতিবেদনটি মূল্যায়ন করতে পারি। নিচের ধরে প্রশ্নগুলোর উত্তর টিক চিহ্ন দেওয়ার মাধ্যমে আমরা সহপাঠীর প্রতিবেদনটি মূল্যায়ন করতে পারি। যে সহপাঠীর প্রতিবেদন আমরা মূল্যায়ন করলাম, নিচের গোল ঘরে সে সহপাঠীর একটি ছবি লাগাতে পারি বা সহপাঠীর ছবি আঁকতে পারি।

 

আমরা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছি আমাদের বের করা উত্তরগুলো থেকে শিক্ষক একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। শিক্ষক যে বিষয়টিকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন তা লিখি।

 




 

 

পরের সেশনের জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজ

এবার পরের সেশনের জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজ হিসেবে শিক্ষক কেন অন্যের সৃষ্ট তথ্য ব্যবহারের সময় সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বললেন তা বের করতে হবে। আমরা আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষক বা ওপরের শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে এর কারণ খুঁজে বের করতে পারি। নিচের বক্সে আমাদের খুঁজে বের করা কারণটি/কারণগুলো লিখি।

আমাদের মতে চিহ্নিত করা বিষয়টি কেন খুব গুরুত্বপূর্ণ




 

 

সেশন ২ঃ  অন্যের সম্পদ সম্পর্কে জানি, সচেতন থাকি

 

গত সেশনে আমরা প্রতিবেদন লিখে এনে তা সহপাঠীদের সঙ্গে বিনিময় করেছি এবং কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে। জানতে পেরেছি যে যখন অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোনো লেখা/ছবি/তথ্য ব্যবহার করতে চাই তখন আমাদের উচিত তাদের নাম দেওয়া। এটি কিন্তু আমাদের বিদ্যালয় পত্রিকা বানানোর সময়ও দেয়াল রাখতে হবে। এই সেশনে আমরা যে বাড়ির কাজটি করেছি তা থেকে শিক্ষক অনেকের কাছ থেকে উত্তর শুনতে চাইবেন; অর্থাৎ কেন কারও তৈরি করা কিছু ব্যবহার করলে সঙ্গে ব্যক্তির নাম দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সে সম্পর্কে কিছু কারণ জানতে চাইবেন। আমাদের সহপাঠীরা যে কারণগুলো বলছে তা থেকে কয়েকটি কারণ আমরা নিচের ঘরে লিখতে পারি।

সহপাঠীদের বলা উত্তর

১.

২.

৩.

৪.

 

এবার চলো নিচের অংশটি পড়ে নিই।

সহজ ভাষায় বলতে গেলে যখন কেউ বুদ্ধি খাটিয়ে কোনো কিছু তৈরি করে সেগুলোকে বলে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ। যেমন কারও লেখা কোনো গল্প, কারো আঁকা কোন ছবি, কারও তৈরি করা কোনো মোবাইল ফোনে অ্যাপ্লিকেশন। ইত্যাদি।

এখন আমাদের মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে, আমরা তো সম্পদ বলতে টাকাপয়সা, জায়গা-জমি, আসবাব ইত্যাদি বুঝি। তাহলে একটি গল্প, কবিতা বা ছবি কীভাবে সম্পদ হয়। কারণ, এগুলো একজন মানুষ বা একটি প্রতিষ্ঠান তার বুদ্ধি বা চিন্তা ব্যবহার করে তৈরি করেছে এবং এটি বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা যায়।

এখানে দুটি ধারণা পাওয়া আমাদের জানা প্রয়োজন।

১। কপিরাইট ২। পেটেন্ট 

 

কপিরাইট হলো যিনি তৈরি করেছেন, তিনি ছাড়া আর কারও এই বিষয়টি বস্তুটি কপি করার অধিকার নেই। যেমন একজন লেখক কোনো গল্প লিখলেন, তিনি গল্পের কপিরাইট নিলেন মানে হচ্ছে, তিনি ছাড়া আর কেউ গল্পটি প্রকাশ করতে পারবেন না।

পেটেন্ট হলো যিনি তৈরি করেছেন, অন্যরাও এটি ব্যবহার করতে পারবেন; কিন্তু সেক্ষেত্রে যিনি তৈরি করেছেন। তার নাম ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবসার স্বার্থে হলে কিছু অর্থ প্রদান করতে হবে। যেমন একজন বিজ্ঞানী একটি ফর্মুলা বানালেন, যা দিয়ে মশা খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এই ফর্মুলা তিনি ছাড়া অন্য কেউ ব্যবহার করতে চাইলে বিজ্ঞানীকে অর্থ প্রদান করতে হবে এবং ফর্মুলা ব্যবহারের জন্য তাঁর নামও উল্লেখ করতে হবে।

 

এখন আমরা একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করি। ধরি, আমাদের মনে একটি মজার গল্পের ধারণা এল। এটি কিন্তু এখনও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদে পরিণত হয়নি। একটি ভাবনা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদে পরিণত হয় যখন সেটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত না হলে সেটি সমাজের অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারে না কাজেই সেটি সমাজ বা অর্থনীতিতে কোনো মূলা যোগ করতে পারে না। তাই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বলতে মানুষ তার চিন্তা, দক্ষতা ও সৃজনশীলতা দিয়ে যখন কোনো সম্পদ তৈরি করে এবং তা সমাজ ও সমাজের মানুষের উপকারের জন্য কোথাও প্রকাশ করে, সেটিই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ।

এবার চলো আমরা কিছু অনুশীলন করি, আমরা কোনটিকে কার বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বলব আর কোনটিকে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বলব না তার অনুশীলন করা যাক। নিচে কিছু ছবি দেওয়া আছে। ছবির পাশে কিছু অনুমান দেওয়া আছে। আমাদের ছবি দেখে এবং অনুমান পড়ে, পাশের কলামে উত্তর দিতে হবে। এর জন্য আমরা সহপাঠীর সঙ্গে দুই মিনিট ছবি নিয়ে আলোচনা করি এবং তারপর কাজটি করি।

 

অনুশীলনঃ 

 

 

আমাদের দেওয়া উত্তরগুলো আমরা আমাদের বন্ধু বা সহপাঠীর সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারি। আমরা নিশ্চয়ই সব পেরে গিয়েছি। খুব ভালো। না পারলেও সমস্যা নেই। আমরা কাজটি ঠিকঠাক মতো করতে পারলে আমাদের নিজেদের নিজেকে অভিনন্দন জানানো উচিত। এখানে যে তারাটি দেওয়া আছে চলো তা আমরা পছন্দমতো রং দিয়ে রং করি এবং নিজেকে উপহার দিই।

 

সেশন ৩ঃ গুপ্তধনের খোঁজে 

 

গত সেশনে আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ধারণা পেলাম ও অনুশীলন করলাম। বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পনের এই ধারণা আমাদের বিদ্যালয় পত্রিকাটি তৈরি করতে অনেক সহায়তা করবে। এবার আমরা একটি খেলা খেলব বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ধরনগুলো বোঝার জন্য। শিক্ষকের কাছ থেকে খেলার নামটি ও কীভাবে খেলতে হবে তা জেনে নিই।

 

 

 

খেয়াল করে দেখি, খেলার মাধ্যমে চিরকুট বের করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা এবং আমাদের সহপাঠীরা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ কত ধরনের হতে পারে তার একটি ধারণা পেয়ে যাচ্ছি। এবার আমাদের প্রথম সেশনের জন্য তৈরি প্রতিবেদনটির সঙ্গে মিলিয়ে দেখি কত ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবহার করে আমরা আমাদের প্রতিবেদনটি লিখেছিলাম। আমাদের প্রতিবেদনের সাথে মেলানোর সুবিধার্থে নিচের বক্সে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ধরনগুলো বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে। এই কাজটি যদি শ্রেণিতে করার সুযোগ না থাকে তাহলে আমরা বাড়িতে গিয়ে অভিভাবক বা বড় কারও সহায্য নিয়েও করতে পারি। আর শ্রেণিতে করতে গেলে আমরা সহপাঠী এবং শিক্ষকের সহায়তা নিতে পারি।

 

 

এবার নিচের বইয়ে লিখি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের কয়টি ধরন আমাদের প্রতিবেদনে আছে।

 

 

সেশন ৪ঃ কাজের মূল্য দেই তো কাজের মূল্য পাই 

 

গত সেশনে আমরা খেলার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ খুঁজে পেয়েছি এবং ধারনা পেয়েছি। এখন বলি এই যে এত ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ আমাদের সামনে উন্মোচিত হলো, সেসব সম্পদ ব্যবহারের সময় আমাদের কী করা উচিত? আমরা আগেও এর উত্তরটি লিখেছি। আমাদের উত্তরটি নিচে লিখি।

 

উত্তরঃ  ………………………………………………………………………………………………………………………..

……………………………………………………………………………………………………………………………………..

…………………………………………………………………………………………………………………………………….. 

এখন চলো আমরা স্বত্বাধিকারী সম্পর্কে, স্বত্বাধিকারীর অধিকার ও কোথাও স্বত্বাধিকারীর নাম না বললে কী হতে পারে তা জেনে নিই। স্বত্বাধিকারী হলেন যিনি কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের মালিক।

মিতু মোবাইলের এমন একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করলো যেটি দিয়ে মানুষ খুব সহজেই তার আশপাশের পুলিশের অবস্থান বুঝতে পারবে এবং সবচেয়ে কাছে যে পুলিশটি আছে তার কাছে সহায়তা চাইতে পারবে। এই আপ্লিকেশন পরিচালনার জন্য মিতু আগে সরকারের কাছ থেকে একটি লাইসেন্স নিল যে এই অ্যাপ্লিকেশনটি মিতুর তৈরি। অর্থাৎ সরকার মিতুকে স্বীকৃতি দিল যে মিতু এই আপ্লিকেশনটি বানিয়েছে। মিতুকে এই অ্যাপ্লিকেশনের স্বত্বাধিকারী বলা হবে। স্বতাধিকারী হিসেবে মিতুর সম্পূর্ণ অধিকার আছে এই আপ্লিকেশনটি কে ব্যবহার করবে বা কে ব্যবহার করতে পারবে না, তা ঠিক করার পাশাপাশি অন্য কেউ মিতুর এই অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করার আগে মিতুর অনুমতি লাগবে এবং কেউ যদি মিতুর অ্যাপ্লিকেশনটি আবার তৈরি করতে চায়, তাহলেও মিতুর অনুমতি লাগবে। তবে এখানে মনে রাখা প্রয়োজন, মিতুর অ্যাপ্লিকেশনের মতো করে হুবহু কেউ যদি কিছু বানাতে চায়, শুধু তাহলেই মিতুর অনুমতি লাগবে। কিন্তু কেউ যদি একই কাজ অন্যভাবে বানায় এবং কিছু অতিরিক্ত সহায়তা যোগ করে, যেমন: পুলিশের সঙ্গে ডাক্তার কোথায় আছেন তা-ও চিহ্নিত করা যাবে, তাহলে কিন্তু সে এটি বানাতে পারে।

 

এখন কথা হলো কেউ যদি মিতুকে না জিজ্ঞেস করে মিতুর বানানো বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবহার করে, তাহলে। মিতু কী করতে পারবে? মিতু প্রমাণ সংগ্রহ করে, মিতুর লাইসেন্স দেখিয়ে আদালতে মামলা করতে পারবে এবং সেই ব্যক্তির কাছ থেকে মিতুর বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরি করার দায়ে তাকে শাস্তি দিতে পারে। এখন বলো তো, আমরা যদি কারও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বা কোনো কিছু যা অন্য ব্যক্তি তৈরি করেছেন তা না বলে ব্যবহার করি বা নিজের নামে বা অন্য ব্যক্তির নামে চালিয়ে দিই তাহলে কী হবে? হ্যাঁ আমাদেরও শাস্তি হতে পারে।

আবার মনে করি, জুয়েল একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ হিসেবে কবিতা বানান। সেক্ষেত্রে জুয়েল তার অধিকার রক্ষার জন্য কী করতে পারে? জুয়েল তার সম্পদের সুরক্ষার জন্য তার যাতায় কবিতাটি লিখে রাখল, সেখানে জুয়েল তার নাম ও তারিখ লিখল না আবার কারও কাছে প্রকাশও করল না, সেক্ষেত্রে জুয়েল কিন্তু দাবি করতে পারবে না ওই কবিতাটি তার। কখনও যদি অন্য কেউ দাবি করে এটি তার কবিতা, তখন জুয়েল কিন্তু কিছু বলতে পারবে না কিংবা আইনের সহায়তাও নিতে পারবে না।

সুতরাং আমরা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের সুরক্ষা তখনই করতে পারব, যখন সম্পদটি প্রকাশ হবে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে না পারলেও বাংলাদেশ কপিরাইট আইনের আওতায় আমরা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদটি রেজিস্ট্রি করতে পারি। তবে এত বড় প্রক্রিয়ায় তোমাদের এই ছোট বেলায় যাওয়া তো কঠিন, তো আমরা একটি বুদ্ধি বের করি, আমরা যখন একটি সম্পদের মালিক হবো অর্থাৎ যখন একটি ছবি তুলব, নাটিকা লিখব, কিংবা কবিতা লিখব সেটি আমরা আমাদের কয়েকজন বন্ধু বা বাবাকে মাকে ই-মেইল, এসএমএস বা চিঠিতে নিজের নাম ও তারিখ দিয়ে পাঠিয়ে রাখব। যদি কখনো কেউ ওই সম্পদ তার নিজের বলে দাবি করে, তখন আমরা প্রমাণ দেখাতে পারব তারও আগের একটি তারিখে এটি প্রকাশ করেছি।

এবার চলো আমরা আরও একটি অনুশীলনী করি। এটি হবে, যদি আমরা স্বত্বাধিকারীর নাম না ব্যবহার করি, তাহলে স্বত্বাধিকারী ব্যক্তির কী ক্ষতি হতে পারে। পাশে বসে থাকা সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিচের ঘারে আমরা আমাদের অনুমানগুলো লিখি।

 

ক্রম 

স্বত্বাধিকারীর ধরন

ক্ষতির ধরন

গায়কগায়ক গান গাওয়ার আগ্রহ হারাবেন। তিনি আর্থিকভাবে লোকসানের শিকার হবেন।
লেখক

……………………………………………………..

……………………………………………………..

 

গবেষক

……………………………………………………..

……………………………………………………..

 

……………………………………………………..

……………………………………………………..

 

 

……………………………………………………..

……………………………………………………..

 

 

……………………………………………………..

……………………………………………………..

 

 

এবারে একটি নমুনা প্রতিবেদন দেওয়া হলো কীভাবে স্বত্বাধিকারীর নাম লেখা যায় তা বোঝার জন্য প্রতিবেদনে কিছু লেখা বেগুনি কালি করা আছে, যা মূলত কোনো নাম এবং সাল। এভাবেই প্রতিবেদনে স্বত্বাধিকারীর নাম লিখতে হয়। তবে এই প্রতিবেদনে সব ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের জন্য কীভাবে স্বত্বাধিকারীর নাম লিখতে হয় তা আসেনি। কোনো কবিতা হলে কবির নাম, কোনো হাতে আঁকা ছবি হলে চিত্রকারের নাম, কোনো ফর্মুলা হলে বিজ্ঞানীর নাম, কোনো দেশের পণ্য বা জাতীয় সংগীত হলে সে দেশের নাম উল্লেখ করতে হয়।

 

→ পরবর্তী সেশনের জন্য প্রস্তুতি
 

এবার আমাদের প্রতিবেদনে যে সব জায়গায় স্বত্বাধিকারীর নাম বসবে তা খুঁজে বের করি এবং গোল চি দিই। এই যে আমরা আমাদের প্রতিবেদনটিতে যে জায়গাগুলো গোল চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করলাম সেসব জায়গায় সঠিক স্বত্বাধিকারীর নাম খুঁজে নিজের প্রতিবেদনে তা লিখে নিয়ে আনতে হবে। প্রয়োজন হলে প্রতিবেদনটি আবার লিখব। এবার প্রতিবেদনটি লেখার সময় নমুনা প্রতিবেদনটি খেয়াল করব কীভাবে স্বত্বাধিকারীর নাম ব্যবহার করা হয়েছে। তথ্যের সঠিক স্বতাধিকারীর নাম খুঁজে বের করতে আমরা আমাদের পরিবার, প্রতিবেশী, শিক্ষক, ওপরের শ্রেণির শিক্ষার্থী, ডিজিটাল মাধ্যম, ইউনিয়ন রিসোর্স সেন্টার বা যেকোনো নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে সহায়তা নিতে পারি। প্রতিবেদনটি আবার সঠিক করে স্বত্বাধিকারীর নাম ব্যবহার করে লেখার মাধ্যমে (আমরা বিদ্যালয় পত্রিকা তৈরিতে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলাম।

 

সেশন ৫ঃ বিদ্যালয় পত্রিকা তৈরি

 

এবার আমরা বিদ্যালয় পত্রিকাটি তৈরি করব। পত্রিকাটি তৈরি করার জন্য এই অভিজ্ঞতার শুরুতে আমরা যে দলে ভাগ হয়ে থিম/ বিষয় নির্ধারণ করেছিলাম, সে দলের সদস্যরা একসঙ্গে বসব এবং নিজেদের তৈরি করা প্রতিবেদন দিয়ে একটি বিদ্যালয় পত্রিকা বানাব। বিদ্যালয় পত্রিকাটি তৈরি করতে হলে আমাদের যেসব নির্দেশনা মানতে হবে তা নিচে দেওয়া হলো-

  • বিদ্যালয় পত্রিকা সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে তৈরি হবে। শ্রেণিতে ছেলে শিক্ষার্থী, মেয়ে শিক্ষার্থী, অন্য সিঙ্কের শিক্ষার্থী এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষাণী মিলে এই বিদ্যালয় পত্রিকাটি তৈরি করা হবে।
  • প্রতিটি দল তাদের নির্ধারিত বিষয়/থিমের ওপর বিদ্যালয় পত্রিকার জন্য বিভিন্ন তথ্য, ছবি, গল্প, কবিতা, প্রতিবেদন সংবলিত উপকরণ বানাবা
  • সব দলের কাজ যুক্ত করে একটি বিদ্যালয় পত্রিকা হবে। 
  • বিদ্যালয় পত্রিকার বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিলিয়ে একটি নাম বা শিরোনাম থাকবে।
  • বিদ্যালয় পত্রিকার জন্য কিছু লেখা শিক্ষার্থীর নিজস্ব লেখা হবে, এবং কিছু লেখা/তথ্য বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করা হবে। বউভয় লেখায় সত্বাধিকারীর নাম থাকবে।
  • একটি আলাদা অংশে /পৃষ্ঠায় আবার সব স্বত্বাধিকারীর নাম দেওয়া হবে এবং সে অংশটিকে সত্বাধিকারীদের তালিকা বা পরিচিতি অংশ হিসেবে নামকরণ করা যেতে পারে।

 

এবার যে বিদ্যালয় পত্রিকাটি বানানো হলো তার একটি ছবি তুলে এবং প্রিন্ট করে তা এখানে লাগাতে পারি যদি এই সুবিধা না থাকে তাহলে পত্রিকার প্রথম পাতার একটি ছবি আঁকতে পারি।

 

 

 

 

 

 

 

অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর করে সকল নির্দেশনা মেনে বিদ্যালয় পত্রিকাটি তৈরি করার জন্য। তৈরি হয়ে যাওয়ার পর পত্রিকাটি আমরা সবাই মিলে আমাদের প্রধান শিক্ষক অথবা বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অথবা বিদ্যালয়ের পাশের বইয়ের দোকানের মালিককে আমাদের তৈরি বিদ্যালয় পত্রিকাটি উপহার হিসেবে দিতে পারি।

এই শিখন অভিজ্ঞতায় আমরা দলে ভাগ হয়ে প্রতিবেদন লেখার জন্য একটি বিষয়/থিম নির্বাচন এবং দলের প্রত্যেক সদস্য বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে ছবি নিয়ে নিজের মতামত দিয়ে নির্ধারিত থিমের ওপর একটি করে প্রতিবেদনটি লিখেছি। এরপর সবাই সবার প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে অনুধাবন করতে পেরেছি যে আরেকজনের তথ্য ব্যবহার করলে তার নাম উল্লেখ করতে হয়। এরপর আমরা খেলার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ধারণা পাব এবং সব ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের জন্য যে স্বত্বাধিকারীর নাম ব্যবহার করতে হয় তা অনুধাব করেছি এবং নাম ব্যবহার না করলে স্বত্বাধিকারীর কী ক্ষতি হতে পারে তা-ও বুঝতে পেরেছি। এবার নিজেদের লেখা প্রতিবেদনগুলো ঠিক করে যে ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ আমরা ব্যবহার করেছি সেসব ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের স্বত্বাধিকারীর নাম দিয়েই প্রতিবেদনটি লিখেছি এবং থিম আকারে একটি বিদ্যালয় পত্রিকা বানিয়েছি। আমরা অনুধাবন করলাম যে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদে স্বত্বাধিকারীর অধিকার ভবিষ্যৎ জীবনে সব সময় নিশ্চিত করা আমাদের একটি দায়িত্ব।

Content added By
Promotion